মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫
ঢাকা মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Post

মেয়াদ শেষ চার বছরেও অসমাপ্ত কুষ্টিয়ার দুটি ব্রিজ নির্মাণ কাজ 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

মেয়াদ শেষ চার বছরেও অসমাপ্ত কুষ্টিয়ার দুটি ব্রিজ নির্মাণ কাজ 

কুষ্টিয়ায় ‘পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ এর অধীন সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া হাট-জামজামী ভায়া ঝাউদিয়া সড়কের কুমার নদীর উপর প্রি-স্ট্রেজড গার্ডার ব্রিজটির ৪ বছরেও নির্মাণ শেষ হয়নি। ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা প্রাক্কলন ব্যয়ে ৮১ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজটি দুই বছর ধরে নির্মাণ বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০২১ সালের মার্চে।

 নির্ধারিত সময়কাল গতবছরের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হলেও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ ফেলে পালিয়ে যাওয়ায়  ঝুলে আছে প্রকল্পটি। এতে গত ৪ বছর ধরে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হয়েছে এই ব্রিজের সুবিধাভোগী কৃষিপ্রধান অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ। 

এছাড়াও হরিনাকুণ্ড ও আলমডাঙ্গা উপজেলার সঙ্গে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার একমাত্র সংযোগ সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এলজিইডি ও ঠিকাদারের গাফিলতি ও অবহেলায় এমন পরিস্থিতি। দ্রুত ব্রিজটির নির্মাণ সম্পন্নের দাবি স্থানীয়দের। তবে অভিযোগ নাকচ করে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জানালেন খুব শিগগিরই ব্রিজটির নির্মানকাজ শেষ করে জনগণের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের নভেম্বরে কুষ্টিয়া-আলমডাঙ্গা সড়কের বিত্তিপাড়া হতে ঝাউদিয়া বাজার যেতে উজানগ্রাম এলাকার গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের (জিকে) খালের উপর ২৫ কি.মি. দৈর্ঘ্য সেতু নির্মাণের আদেশ দেয়া হয়। এই ব্রিজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।  

একই বছরের ৩ নভেম্বর কার্যাদেশ পাওয়া সেতু নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর শেষ করার কথা। নির্ধারিত সময় পার হলেও কাজ হয়েছে মাত্র ২৫ থেকে ৩০%। ওই সেতু থেকে মাত্র এক কি.মি. দূরে একই সড়কের কুমার নদীর উপর ৮১ মিটার দৈর্ঘ্যের আরেকটি সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। 

এই সেতুতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু কাজ হয়েছে আনুমানিক মাত্র ৩০%। শুধুমাত্র কয়েকটি পিলার দেখা যাচ্ছে। সেতু দুটি নির্মাণের কাজ পান পাবনা জেলার এমএনএম অ্যান্ড এসই  (জেভি) নামের যৌথ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক পাবনার বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার নুরুজ্জামান মিয়া। 

ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে এলজিইডি কাজের মেয়াদও বাড়িয়েছে। তারপরেও কাজ হয়নি। পরবর্তীতে অন্য এক ঠিকাদরকে ব্রিজ নির্মাণের কাজ দেয়া হলে সেও  কাজ না করে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। 

বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ ও কৃষি পণ্য বহন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্রিজটির নির্মাণ শেষ করে স্বাভাবিক চলাচলের রাস্তাটিও মেরামতের দাবি জানান তারা। 

ব্রিজ সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা জরিনা খাতুন (৫৫) অভিযোগ করে বলেন, সেই ৪ বছর আগে শুরু হয়ছে এই কাম, এতোদিন সহ্য কইরি ছিলাম যে কাজ শ্যাষ হলিই তো আবার সব ঠিক হয়ে যাবিনি। কিন্তু একন দেখতিচি, এডি আমারে গলার গাড় হয়ে গেছে। সরকার যিন কামডা তাড়াতারি শ্যাষ কইরি দেয় এই আমার আবেদন।

উজানগ্রাম এলাকার বাসিন্দা কৃষক রব্বানী প্রামানিক (৬০) তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, গা গ্রামের মানুষের কষ্ট দ্যাকার কেউ নেই গো। এই যে গাংয়ের উপর ব্রিজটা আইজ ৪ বছর ধরি শেষ করতি পারতেছে না। কি এর সমস্যা আর কিইবা তার সুমাধান হবি কিডা দেকপি কও ? আমরা মাঠ ঘাটের ফসল আনতি কত কষ্ট কত্তি হচ্ছে, কষ্টডা তো আমরাই পাচ্ছি। 

কুষ্টিয়া জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সদস্য হাজি গোলাম মহসিন বলেন, কুষ্টিয়ায় নির্মাণাধীন রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ও অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পগুলো নানা অনিয়ম অবহেলায় অসম্পন্নভাবে ঝুলে আছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে সব প্রস্তুতি ও সক্ষমতাসহ প্রকল্প বাস্তবায়নের যাত্রা শুরু হলেও ঝুলে থাকা এসব প্রকল্পে একদিকে বাড়ছে ব্যয় অন্যদিকে স্বভাবিক চলাচল ব্যাহতের পাশাপাশি দীর্ঘ হচ্ছে ভোগান্তি। 

এবিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, উজানগ্রাম-ঝাউদিয়া সড়কের কুমার নদীর উপর নির্মাণাধীন ৮১ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজটির নির্মাণ কাজ কিছুদিন বন্ধ ছিলো তবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে। 

টিএইচ